Find answers to some common questions about CAM-SUST and our activities. If you don’t find what you’re looking for here, feel free to reach out to us via phone or email
ক্যাম-সাস্ট শাবিপ্রবির একমাত্র জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক সংগঠন যার পূর্ণরূপ হলো কোপার্নিকাস অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল মেমোরিয়াল অব সাস্ট। সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে ২০১২ সালের জুলাই মাসের ৭ তারিখে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধভুক্ত হয় একই মাসের ১৭ তারিখে। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হল জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা করা এবং এর প্রসারের মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার দূর করা। তাই ক্যাম-সাস্টের মূলমন্ত্র হলো “অসংখ্য অজানা থেকে জ্ঞান আহরণ করে সেই জ্ঞানকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।” এই মূলমন্ত্রকে মাথায় রেখে ক্যাম-সাস্টের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে সবাই এই বিষয়ে কথা বলবে, একজন আরেক জনের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই ক্যাম-সাস্ট নানামুখী আয়োজনের মধ্য দিয়ে সদস্যদের জ্যোতির্বিজ্ঞান শিখন ও সর্বসাধারণের মাঝে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অন্য সব সংগঠনের মতো আমাদেরও কিছু নিয়মিত কার্যক্রম আছে। যার মধ্যে অন্যতম হল: পাক্ষিক পাঠচক্র, কসম্যানিয়া, অ্যাস্ট্রো কার্নিভাল, স্টারগেজিং, ক্যাম-টক, জার্নাল ক্লাব, লাইব্রেরি, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ওয়ার্ল্ড স্পেস উইক উদযাপন, রিসার্চ এন্ড প্রজেক্ট, সামার/উইন্টার স্কুল ইত্যাদি।
পাঠচক্রের মাধ্যমে আমরা যেসকল অজানা জ্ঞান আহরণ করেছি তা সহজভাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থাপন করাই আমাদের এই সেক্টরের মূল লক্ষ্য। এই সেক্টরের জন্ম অনেকটা আমাদের দায়বদ্ধতা থেকে। প্রশ্ন হল কিসের দায়বদ্ধতা? আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি তাদের পড়াশুনার খরচের বেশ বড় একটা অংশ আসে দেশের দিনমজুর, কৃষক ও শ্রমিকদের থেকে। তাই তাদের জন্য কিছু করা আমাদের কর্তব্য। তাদের জন্য কিছু করা বলতে আমরা তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু করা বুঝাচ্ছি। তাই আমরা বাংলাদেশের প্রতন্ত অঞ্চলগুলোর স্কুল-কলেজে যাই এবং শিক্ষার্থীদের সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা, গল্প ও খেলাধুলা করি। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এখন পর্যন্ত বরিশাল, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ, বগুড়াতে স্কুল প্রোগ্রাম বা কসম্যানিয়া আয়োজন করেছি।
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়া এই স্কুল প্রোগ্রাম এর লক্ষ্য। যাদের কাছে জ্যোতির্বিজ্ঞ্যান এখনও ব্ল্যাকহোলের মত অন্ধকার একটি অজানা বিষয় তাদের পর্যন্ত পৌছানোই আমাদের লক্ষ্য৷ আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি কসম্যানিয়াতে যা যা করে থাকি তা হলো- জ্যোতির্বিজ্ঞানের চমকপ্রদ বিষয়গুলোর উপরে প্রেজেন্টেশন যা ডিজিটাল প্রজেক্টর কিংবা হাতে আঁকা পোস্টারের মাধ্যমে একজন প্রেজেন্টর বিভিন্ন ক্লাস এর শিক্ষার্থীদের সামনে তা উপস্থাপন করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রেজেন্টেশন থেকে চিন্তা করে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যে একটি মজার পরীক্ষা রাখা হয়, কখনো বা রাখা হয় গেইম, অথবা শিক্ষার্থীদের পোস্টার প্রেজেন্টেশন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বয়সভেদে নানামুখী কার্যক্রম রাখা হয়। এতে তাদের অংশগ্রহণ থাকে চোখে পড়ার মতো! এছাড়াও সৌর মডেলের মাধ্যমে তাদের কিভাবে চন্দ্র গ্রহণ ও সুর্য গ্রহণ হয় তা ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে দেখানো হয়। এছাড়া ভিআর প্রদর্শনী করে অ্যাপোলো ১১ এর ল্যান্ডিং স্পট কিংবা চন্দ্রপৃষ্ঠে হাঁটার অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের নিকট সবথেকে রোমাঞ্চকর বিষয়! সবশেষে আমরা আয়োজন করি, কাগজের প্লেন উড়ানোর প্রতিযোগিতা এবং ওয়াটার রকেট লঞ্চ প্রদর্শনী। এইভাবে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আমাদের কসম্যানিয়া বা স্কুল প্রোগ্রামগুলো পূর্ণতা লাভ করে।
ক্যাম-সাস্টের সদস্যপদ পাঁচ শ্রেণীর। এগুলো হল- সাধারণ সদস্য, কার্যনির্বাহী কমিটি সদস্য, বিশেষ সদস্য, পরামর্শক সদস্য ও আজীবন সদস্য। শাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত যেকোনো শিক্ষার্থী নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে নিবন্ধন ফর্ম পূরণের মাধ্যমে সাধারণ সদস্যপদের আবেদন করতে পারে। এছাড়া শাবিপ্রবির বাইরে জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী যেকোনো স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ক্যাম-সাস্টের বিশেষ সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে পারে। বিশেষ সদস্যপদে আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো অর্থমূল্য প্রদান করতে হয় না।
প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত সাংগঠনিক সপ্তাহে ক্যাম-সাস্টের টেন্টে এসে সাধারণ ও বিশেষ সদস্যপদের জন্য নিবন্ধন ফর্ম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যায়। এছাড়া প্রায় সারা বছর ওয়েবসাইটে অনলাইন নিবন্ধন ফর্ম পূরণের মাধ্যমেও আবেদন করা যায়। আবেদন পরবর্তী একটি অনলাইন বা অফলাইন ভাইবার মাধ্যমে সদস্যপদ দেওয়া হয়।
বলা হয়ে থাকে, যে মানুষের কৌতূহল নেই তার আত্মা মৃত। প্রাচীনকালে মানুষ যখনই দৈনন্দিন জীবনের কাজ থেকে সামান্য অবসর পেয়েছে তার মধ্যে খানিকটা সময়ের জন্য হলেও আকাশের দিকে তাকিয়েছে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে সময় ও ঋতুর পরিবর্তনের সাথে মহাকাশীয় বস্তুগুলোর অবস্থান পরিবর্তনের মিল খুঁজে পেয়েছে। মানুষ শিখেছে জ্যোতিষ্কগুলোর অবস্থান দেখে সময়ের পরিমাপ। বর্তমান যুগে সময় পরিমাপের জন্য আকাশ পর্যবেক্ষণ করা না হলেও কারণে অকারণে আকাশের দিকে তাকানো অনেকটা মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। আর বিজ্ঞানের জগতের খানিকটা হলেও খোঁজখবর রাখেন এমন যেকোনো মানুষের জানার কথা যে আমাদের অস্তিত্বের সাথে আকাশের তারাকারাজি জড়িত। সূর্য নামের সৌরজগতের কেন্দ্রের তারাটি ছাড়া যেমন আমাদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না তেমনি চাঁদ নামক পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি বা অন্য কোন মহাকাশীয় বস্তুর অকস্মাৎ পরিবর্তনের জন্য পৃথিবীর উপর পড়তে পারে সুদূরপ্রসারী প্রভাব। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার, আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন তারার অংশ। কারণ আমাদের দেহের প্রতিটি মৌলিক উপাদানেরই সৃষ্টি কোন না কোন তারার কেন্দ্রে। তাই বলা যায় জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ থাকা অনেকটা নিজের অস্তিত্ব নিয়ে আগ্রহ থাকার মতোই। আর জ্যোতির্বিজ্ঞান শুধু আমাদের নয় বরং পুরো মহাবিশ্বের অস্তিত্বের রহস্যকেই ব্যাখ্যা করে। আর মহাবিশ্ব নিয়ে, নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে আগ্রহী মানুষদের কৌতূহল নিবারণের জন্য, গবেষণার জন্যই বাংলাদেশে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত সংগঠনের প্রয়োজন। কারণ কৌতূহল কিংবা আগ্রহ শুধুমাত্র উন্নত বিশ্বের মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়, বরং সারা বিশ্বের মানুষের বৈশিষ্ট্য, বাংলাদেশের মতো যেকোনো তৃতীয় বিশ্বের মানুষেরও।